বিস্তারিত বিষয়
শার্শার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে
চিকিৎসকদের অবহেলা ও কমিশন বানিজ্যে রোগীরা প্রতারিত
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে
[ভালুকা ডট কম : ০৮ জানুয়ারী]
প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ৫০শয্যার শার্শা উপজেলা (নাভারণ-বুরুজবাগান) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেবা প্রদানের জন্য দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সরকারি হাসপাতালে এখন নামমাত্র কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে প্রতারনা ও বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিকের সাথে কমিশন বানিজ্যের প্রমাণ মিলেছে।
সম্প্রতি এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে উন্নিত হয়ে ৫০ শয্যায় রুপান্তরিত হয়েছে। ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও এখনও পর্যন্ত কোন ডাক্তার বা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে ২শ’ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নিয়ম থাকলেও সাড়ে ১০টার আগে কোন চিকিৎসককে হাসপাতালে দেখা মেলে না। আবার বেলা ১টা বাজলে কোন ডাক্তারকে হাসপাতালে খুজে পাওয়া যায় না। দুর-দুরন্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা চিকিৎসকের অপেক্ষায় বসে থেকে কাংখিত সেবা না পেয়ে চলে যায়।
উপজেলার আমতলা-গাতিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা রওশনারা (৬০) ও তাহেরা বেগম (৫৫) জানালেন, সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টিকিট কেটে ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছি এখনও কোন ডাক্তার হাসপাতালে আসেনি। হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা সত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা নিজেই বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর প্রমাণ রয়েছে।
উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের নয়নতারা (২৭) জানান, হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিজামুল ইসলাম কয়েকটি রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসতে বলেন। আমরা গরীব মানুষ, বেসরকারী হাসপাতালে ভালো ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলে অনেক টাকা লাগে তাই নাভারণের এই হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু ডাক্তারের অভাবে আমরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি না। কিন্তু উল্লেখিত পরীক্ষা গুলি হাসপাতালের নিজস্ব প্যাথোলজিক্যাল বিভাগ থেকে করানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মরত টেকনিশিয়ান হুমায়ুন কবীর স্বীকার করলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানালেন, এই হাসপাতালের নিজস্ব প্যাথোলজিক্যাল বিভাগে যে সব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় তার ৮০ভাগ রোগী কমিশন বানিজ্যের জন্য চিকিৎসকরা বাইরের পছন্দের বেসরকারী ক্লিনিকে পাঠাচ্ছেন। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এনাম উদ্দিন শিপন অফিসের বিভিন্ন কাজে অধিকাংশ সময়ে হাসপাতালের বাইরে থাকেন।
দাঁতের চিকিৎসক রাবেয়া খাতুনের চিকিৎসা সেবার মান সন্তোষজনক নয় বলে রোগীর উপস্থিতি এতই নগন্য যে, তিনি সারাক্ষন মোবাইল ফোনে ফেসবুক দেখেই সময় কাটান এবং তার সহকারী আনিছুর রহমান রোগীদের সেবা না দিয়ে প্রায়ই হাসপাতালের বারান্দায় বা অন্যরুমে গল্প করে সময় কাটাতে দেখা য়ায়। নাভারণ বাজারে আনিছুর রহমানের নিজস্ব দন্ত চিকিৎসালয় থাকায় তিনি হাসপাতালের রোগীদের সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক উৎপলা দত্ত ডিউটি চলাকালিন অধিকাংশ সময়ে বাসায় অবস্থান করেন। হোমিও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর উপস্থিতি দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা মোবাইল ফোনে চিকিৎসক উৎপলাকে চেম্বারে ডেকে পাঠান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কন্যা চিকিৎসক হুমায়রা আশরাফী তন্বী জরুরী বিভাগে ডিউটিরত অবস্থায় এক রোগীর অভিভাবকের সাথে অনাকাংখিত ও অশালীন আচরণ করতেও দেখা গেছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এতই নাজুক যে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ষ্টোরকিপার জরুরী বিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আবার কোরবানী ঈদের সময় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক উৎপলা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এক সপ্তাহ যাবৎ এালোপ্যাথিক চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে, হাসপাতালে সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, গাইনি বিভাগ ও এ্যানেস্থেসিয়া বিভাগে কনসালটেন্ট পদে কখনো কোন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়নি একযুগ ধরে। এভাবে উপজেলার একমাত্র সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
হাসপাতালের বিপর্যস্থ চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা বলেন, সব উপজেলা হাসপাতালে ডাক্তারের সংকট রয়েছে, কোথাও দুই/তিনজনের বেশি ডাক্তার নেই। সরকারী ভাবে নতুন করে নিয়োগ দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং রোগীরাও তাদের কাংখিত সেবা পাবে। #
সতর্কীকরণ
সতর্কীকরণ : কলাম বিভাগটি ব্যাক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য,আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তির কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতায় তাই কলাম বিভাগের লিখা সমূহ এবং যে কোন প্রকারের মন্তব্যর জন্য ভালুকা ডট কম কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় । প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিজ দ্বায়ীত্বে তার মন্তব্য বা লিখা প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষ কে দিচ্ছেন ।
কমেন্ট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- রাণীনগরে বাঁধের মাটি যাচ্ছে ইট ভাটার পেটে [ প্রকাশকাল : ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- যশোরে চলছে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক [ প্রকাশকাল : ০১ মার্চ ২০২৪ ০৩.০০ অপরাহ্ন]
- গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক্টর [ প্রকাশকাল : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫.০০ অপরাহ্ন]
- শার্শায় বালু উত্তলনে পরিবেশ হুমকির মুখে [ প্রকাশকাল : ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.৩৫ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরের আবাদপুকুর হাটের জরাজীর্ণ অবস্থা [ প্রকাশকাল : ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০.৩০ পুর্বাহ্ন]
- জনবল সংকটে তজুমদ্দিনে বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা [ প্রকাশকাল : ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে আবাসিক মাস্টারপাড়া [ প্রকাশকাল : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২.০০ অপরাহ্ন]
- রায়গঞ্জ পৌরসভায় নির্মিত ড্রেন বেড়েছে দুর্ভোগ [ প্রকাশকাল : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২.০০ অপরাহ্ন]
- তজুমদ্দিনে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ [ প্রকাশকাল : ২২ আগস্ট ২০২৩ ০২.২৫ অপরাহ্ন]
- ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ এমটিএফই [ প্রকাশকাল : ২১ আগস্ট ২০২৩ ০১.৪০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম [ প্রকাশকাল : ১২ আগস্ট ২০২৩ ০২.০০ পুর্বাহ্ন]
- তজুমদ্দিন হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক ও করোনার টিকা [ প্রকাশকাল : ২৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০০ অপরাহ্ন]
- নান্দাইলে অবৈধ কারখানায় হুমকিতে জনজীবন [ প্রকাশকাল : ০৭ জুলাই ২০২৩ ১১.০০ অপরাহ্ন]
- রাণীনগরে শিক্ষক যখন চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীরা [ প্রকাশকাল : ০৪ জুলাই ২০২৩ ০১.০৫ অপরাহ্ন]
- অস্তিত্ব সংকটে রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা বন্দর [ প্রকাশকাল : ০৩ জুলাই ২০২৩ ০১.১০ অপরাহ্ন]